সূচিপত্র
বাংলাদেশ ২০⁰ ৩৪′ উত্তর অক্ষরেখা থেকে ২৬⁰ ৩৮’ উত্তর অক্ষরেখার মধ্যে এবং ৮৮⁰ ০১′ পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে ৯২⁰ ৪১′ পূর্ব দ্রাঘিমারেখার মধ্যে অবস্থিত। কর্কটক্রান্তি রেখা বা ট্রপিক অব ক্যান্সার বাংলাদেশের প্রায় মধ্যভাগ দিয়ে অতিক্রম করেছে। পূর্ব থেকে পশ্চিমে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিস্তৃতি প্রায় ৪৪০ কি.মি. এবং উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে সর্বোচ্চ বিস্তৃতি ৭৬০ কি.মি.।
বাংলাদেশের –
পশ্চিমে | ভারতের পশ্চিমবঙ্গ |
পূর্বে | আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও দক্ষিণ পূর্বে ত্রিপুরা ও মিয়ানমার সীমান্ত |
উত্তরে | পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় |
দক্ষিণে | বঙ্গোপসাগর |
বাংলাদেশের রাজধানী ও সবচেয়ে বড় শহর ঢাকা। এর প্রতিপাদ স্থান চিলির নিকট প্রশান্ত মহাসাগরে।
বাংলাদেশের টেরিটোরিয়াল বা রাজনৈতিক সমুদ্রসীমা ১২ নটিক্যাল মাইল এবং অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা বা Exclusive Economic Zone – ২০০ নটিক্যাল মাইল। এছাড়া বাংলাদেশের উপকূলীয় ভূখণ্ড সমুদ্রে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্য্ন্ত যার ভৌগোলিক নাম মহীসোপান।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তি রায়ে ১,০০,০০০ বর্গ কি.মি. এরও বেশি জলসীমায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অপরদিকে ভারতের সাথে বিরোধ নিষ্পত্তি রায়ে আরও ১৯,৪৬৭ বর্গ কি.মি. জলসীমায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। এর দৈর্ঘ্য ১২০ কি.মি.। সাগরকন্যা কুয়াকাটা (পটুয়াখালি) সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য ১৮ কি.মি.।
আরও পড়ুন – আন্তর্জাতিক সমুদ্র কনভেনশন/আইন
বাংলাদেশের সাথে ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। ভারতের ৫ টি রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে। এগুলো হলো: পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মেঘালয়। উল্লেখ্য ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলো হলো – আসাম, মিজোরাম, মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, অরুনাচল ও ত্রিপুরা। এদের মধ্যে ৪টির সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে।
বাংলাদেশের সর্বমোট সীমারেখা ৪৭১১ কি.মি। বাংলাদেশ-ভারতের সীমারেখা ৩৭১৫ কি.মি বা বিজিবি’র তথ্য মতে, ৪১৫৬ কিলোমিটার। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমারেখা ২৮০ কি.মি. বা বিজিবি’র তথ্য মতে, ২৭১ কিলোমিটার।
ভারতের রাজ্য | বাংলাদেশের সংলগ্ন জেলা |
---|---|
আসাম | ৪টি (কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজার) |
ত্রিপুরা | ৭টি (ফেনী, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, ব্রহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটি) |
মেঘালয় | ৪টি (নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও জামালপুর) |
মিজোরাম | ১টি (রাঙ্গামাটি) |
পশ্চিমবঙ্গ | বাকিগুলো |
অপরদিকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের জেলা ৯টি। যথা: মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, উত্তর চব্বিশ পরগোনা, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কুচবিহার ও দার্জিলিং। বাংলাদেশ সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের চিন প্রদেশের মংডু শহর অবস্থিত। বিভাগ অনুযায়ী সীমান্তবর্তী জেলা –
বিভাগ | মোট জেলা | সীমান্তবর্তী জেলা |
---|---|---|
ঢাকা | ১৩ | নেই |
চট্টগ্রাম | ১১ | ৮টি: চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, ও বান্দরবান, কক্সবাজার |
খুলনা | ১০ | ৬টি: সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া |
রাজশাহী | ৮ | ৪টি: রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও জয়পুরহাট |
রংপুর | ৮ | ৬টি: পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম |
বরিশাল | ৬ | নেই |
সিলেট | ৪ | ৪টি: সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ |
ময়মনসিংহ | ৪ | ৪টি: জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা |
উল্লেখ্য ময়মনসিংহ বিভাগের সকল জেলাই ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী। সীমান্তবর্তী উল্লেখযোগ্য স্থানের নাম –
স্থান | জেলা |
---|---|
বেড়ুবাড়ী
বাংলাবান্ধা (স্থলবন্দর) |
পঞ্চগড় |
বুড়িমারী (স্থলবন্দর) | লালমনিরহাট |
হিলি (স্থলবন্দর)
বিরল (স্থলবন্দর) |
দিনাজপুর |
সোনামসজিদ (স্থলবন্দর) | চাঁপাইনবাবগঞ্জ |
বেনাপোল (স্থলবন্দর) | যশোর |
হালুয়াঘাট | ময়মনসিংহ |
আখাউরা (স্থলবন্দর) | ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া |
দর্শনা (স্থলবন্দর) | চুয়াডাঙ্গা |
বুড়িচং | কুমিল্লা |
তামাবিল (স্থলবন্দর) | সিলেট |
পানছড়ি | খাগড়াছড়ি |
উখিয়া | কক্সবাজার |
১ আগস্ট ২০১৫ তারিখে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের সীমান্ত নতুন কাঠামো পায়।
সীমান্তরক্ষী বাহিনী: বিজিবি (বাংলাদেশ), বিএসএফ (ভারত) ও বিজিপি (মিয়ানমার)।
বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ২৬.০১⁰ সেলসিয়াস। গড় বৃষ্টিপাত ২০৩⁰ সেন্টিমিটার এবং এপ্রিল উষ্ণতম মাস। দেশের উষ্ণতম স্থান লালপুর, নাটোর এবং শীতলতম স্থান শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় লালাখান, সিলেট এবং সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত হয় লালপুর, নাটোর।
বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ। আবার বাংলাদেশের বৃহত্তম ব-দ্বীপ হল সুন্দরবন। দেশের প্রায় সমগ্র অঞ্চল এক বিস্তৃর্ণ সমভূমি। তবে সামান্য পরিমাণ উচ্চভূমিও রয়েছে।
ভূমির অবস্থান এবং গঠনের সময়ক্রমিক দিক থেকে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতিকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
ভূতাত্ত্বিকভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন ভূমিরূপ হচ্ছে টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ। টারশিয়ারি যুগে হিমালয় পর্বত উত্থিত হওয়ার সময় এসব পাহাড় সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি এলাকার দীর্ঘকালের প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয়ের ফলে পাহাড়ি এলাকার উচ্চতা কমে ক্ষয়িত অংশের দ্বারা সংলগ্ন এলাকা ভরাট হয়ে নতুন মৃত্তিকার সমতল ভূমি সৃষ্টি করছে।
রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ অবস্থিত। বাংলাদেশের মোট ভূমির প্রায় ১২% এলাকা নিয়ে টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ অবস্থিত। এসকল পাহাড়কে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের (রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম) পাহাড়গুলোর গড় উচ্চতা ৬১০ মিটার। আসামের লুসাই ও মিয়ানমারের আরাকান এলাকার পাহাড়ের সাথে এদের মিল দেখা যায়। এ সকল পাহাড় বেলে পাথর, স্লেট পাথর ও কর্দমের সংমিশ্রণে গঠিত। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ তাজিনডং(বিজয়)-র উচ্চতা ১২৩১ মিটার। এটি বান্দরবন জেলায় অবস্থিত।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায়) ছোট বড় বিচ্ছিন্ন কতগুলো পাহাড় অবস্থিত। এ অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য পাহাড় হল সুনামগঞ্জের ছাতক পাহাড়। ছাতক (উপজেলা) শহরের উত্তরে প্রায় ৪০ কি.মি. স্থান জুড়ে এই টিলা পাহাড়টি অবস্থিত। এছাড়া মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সীমানায় অবস্থিত পাহাড়গুলো কোনোরূপ গিরিশ্রেণী গঠন করেনি। এদেরকে ত্রিপুরার পাহাড় বলা হয়।
উল্লেখযোগ্য কিছু পাহাড় –
পাহাড় | অবস্থান |
---|---|
চন্দ্রনাথ পাহাড় | সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম |
চিম্বুক পাহাড় | বান্দরবন |
লালমাই পাহাড় | কুমিল্লা |
তাজিনডং
ক্রেওক্রাডং |
বান্দরবন |
আলুটিলা পাহাড় | খাগড়াছড়ি |
উল্লেখযোগ্য ভ্যালি বা উপত্যকা –
উপত্যকা | অবস্থান |
ভেঙ্গি ভেলী | কাপ্তাই লেক, রাঙ্গামাটি |
বালিশিরা ভেলী | মৌলভীবাজার |
হালদা ভেলী | খাগড়াছড়ি |
সাজেক ভ্যালী | রাঙামাটি |
সাঙ্গু ভ্যালি | চট্টগ্রাম |
মাইনমুখী ভ্যালি | রাঙামাটি |
বাংলাদেশের প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ প্রায় ২৫০০০ বছরের পুরোনো। অনুমান করা হয় যে, প্লাইস্টোসিস যুগের অন্তঃবরফগলা পানিতে বন্যার সৃষ্টি হয়ে এ ভূমি গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ৮% জায়গা জুড়ে এ ভূমিরূপ অবস্থিত। এ উচ্চভূমিকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা: বরেন্দ্রভূমি, মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং লালমাই পাহাড়।
বরেন্দ্রভূমি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। এ এলাকার মাটি ধূসর ও লাল। আয়তন ৯৩২০ বর্গ কি. মি.। রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চল। এটি প্লাস্টেসিনকালের সর্বোচ্চ উঁচু ভূমি। বরেন্দ্র এলাকা প্লাবন সমভূমি অঞ্চলের চেয়ে ৬ থেকে ১২ মিটার উঁচু।
ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত এ অঞ্চল বিস্তৃত যা আয়তনে ৪১০৩ বর্গ কি. মি.। টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে অবস্থিত এ অঞ্চলের উত্তরাংশ মধুপুর গড় এবং দক্ষিণাংশ ভাওয়ালের গড় নামে পরিচিত। বরেন্দ্রভূমির মত এখানেও মাটির রং লাল এবং মাটি কঙ্করময়।
কুমিল্লা শহড়ের ৮ কি. মি. পশ্চিমে অবস্থিত। আয়তন প্রায় ৩৪ বর্গ কি. মি.। এর গড় উচ্চতা ২১ মিটার বা ৭০ ফুট।
এ অঞ্চলটি প্রধান নদীগুলো দ্বারা পরিবাহিত পলিমাটি দ্বারা গঠিত। প্লাবন সমভূমির আয়তন ১, ২৪, ২৬৬ বর্গ কি. মি.। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশের প্রায় ৮০% ভূমি এরূপ ভূমিরূপের। বাংলাদেশের প্লাবন সমভূমিকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায় –
পাদদেশীয় সমভূমি: পাহাড়ী নদী দ্বারা পর্বতের ঢাল হতে ক্ষয়প্রাপ্ত প্রস্তর ও শিলাখন্ড, কাঁকর, নুড়ি ও বালুকণা প্রভৃতি পর্বতের পাদদেশে সঞ্চিত হয়। নদী দ্বারা এভাবে অবক্ষেপণের ফলে পর্বতের পাদদেশে সমভূমির সৃষ্টি হয়। একে পাদদেশীয় সমভূমি বলে। যেমন- বাংলাদেশের দিনাজপুর এবং রংপুর জেলার অধিকাংশই পাদদেশীয় সমভূমি।
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা প্লাবন সমভূমি: এটিই বাংলাদেশের মূল প্লাবন সমভূমি। বৃহত্তর ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, পাবনা ও রাজশাহী অঞ্চলের অংশবিশেষ নিয়ে এ সমভূমি গঠিত।
বদ্বীপ অঞ্চলীয় সমভূমি: দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সমভূমিকে সাধারণত বদ্বীপ বলা হয়। বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর, বরিশাল. পটুয়াখালী অঞ্চল এবং রাজশাহী, পাবনা ও ঢাকা অঞ্চলের কিছু অংশ জুড়ু এ অঞ্চল বিস্তৃত।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস